শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কী এবং কেন পালন করবো

মো. ছাব্বির হোসাইন, প্রতিদিনের বার্তা / ৭৭ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
মিশরের কায়রোর বোলাক এভিনিউতে ১৯০৪ সালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)'র শোভাযাত্রা।
মিশরের কায়রোর বোলাক এভিনিউতে ১৯০৪ সালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)'র শোভাযাত্রা।

ঈদ ও মিলাদ কী?
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)(আরবি: মাওলিদ আন-নাবী, কখনো কখনো সহজভাবে বলা হয় মাওলিদ, মেভলিদ, মেভলিট, মুলুদ আরো অসংখ্য উচ্চারণ; কখনো কখনো: মিলাদ) ঈদ অর্থ খুশী, আনন্দ‌ ও মিলাদ অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জন্মস্থান, জম্মোৎসব, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। এ অর্থে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ অদৃশ্যের সংবাদদাতা আল্লাহর প্রেরিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমন উপলক্ষে শরয়ী পন্থায় খুশী, আনন্দ উদযাপন করা। এতদ উপলক্ষে নবীজির জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলীর বিস্তর বর্ণনা, তাঁর বাল্যজীবন ও শৈশব, কিশোর জীবন, মক্কী জীবন, মদনী জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, হিজরত, জিহাদ, ইসলামী দাওয়াত প্রচার সম্প্রসারণ, সার্বিক বিষয়াদির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করার নামই মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল-এর বারো তারিখে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

মিলাদুন্নবী প্রায় সব ইসলামি দেশেই পালিত হয় এবং অন্যান্য দেশে যেখানে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা আছে। মূলধারার সুন্নি ইসলাম, শিয়া ইসলাম এবং ইসলামের অন্যান্য শাখার অনুসারীগণ এটি পলন করেন। আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেনিন, ব্রুনাই, বুরকিনা ফাসো, চাদ, মিশর, গাম্বিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজার, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, সেনেগাল, সোমালিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেনে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে উৎযাপিত হয়। এছাড়াও সৌদি আরব ও মদিনাসহ আরো অনেক দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করতে দেখা যায়।

কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের গুরুত্ব:
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন “কুল বিফদলিল্লাহি ওয়াবিরাহমাতিহি ফবেজালিকা ফালয়াফরাহু হুয়া খায়রুম মিম্মা ইয়াযমাউন।” (পারা-১১, রুকু-১১)

অর্থাৎ, হে প্রিয় হাবীব বলে দিন আপনি, তারা যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে। তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে উক্ত খুশি ও আনন্দ অতি উত্তম।

উপরে বর্ণিত আয়াতে যেরূপভাবে নেয়ামতের র্চচা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে, অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের নির্দেশ রয়েছে। প্রিয় নবী যে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর রহমত, এতে মুসলিম মিল্লাতের কোনো দ্বিমত নেই। অত্র আয়াতে যদি ফজল ও রহমত দ্বারা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করা হয় তাও হুজুরের ওসীলায় সৃজিত। সর্বাবস্থায় প্রিয় রাসুলের পবিত্র সত্তা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হওয়া প্রমাণিত। উভয় জাহানে তারই রহমতের বারিধারা প্রবাহিত, সুতরাং তাঁর গুণগান, শান-মান, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য স্মরণ করা ও আলোচনা করা বিধাতার আনুগত্যের নামান্তর, পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা ও অস্বীকার করা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।

হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য:
হযরত কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসুলের কাছে সোমবার দিবসে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, প্রিয় নবী এরশাদ করেন, ফিহী উলিদতু ওয়াফিহী উনযিলা আলাইয়া। অর্থাৎ এ দিনেই আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং এদিনেই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (মিশ্‌কাত শরীফ, ১৭৯ পৃষ্ঠা)

প্রিয় নবীর উপরোক্ত হাদিস থেকে মিলাদুন্নবী তথা প্রিয় নবীর জন্ম দিবস ও নুযুলে কুরআন দিবসের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবসের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন ও নেয়ামত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা পালনের বৈধতা প্রমাণিত হলো। সুতরাং সাপ্তাহিক হিসেব অনুসারে প্রতি সোমবার যেমনি মুসলমানদের নিকট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে তেমনি বার্ষিক হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্ব মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ এবং এ মাসে এ দিবসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম।

২৭ রমজান পবিত্র কুরআন অবতরনের দিন হিসেবে যেভাবে গোটা রমজান মাস সম্মানিত স্মরণীয় বরণীয়। তেমনিভাবে প্রিয় নবীর বেলাদত দিবস সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল মাসে হওয়ার কারণে গোটা মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত এবং এ মাসের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ওলামায়ে ইসলামের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। শুক্রবার আদম (আ.) এর জন্ম দিবস হওয়ার কারণে যদি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত হয় তাহলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবসের পবিত্র ক্ষণ ও মুহূর্ত কেমন হওয়া উচিত। তাঁর সমুন্নত মর্যাদার যথার্থ বর্ণনা আদৌ কি সম্ভব!

এক শ্রেণির লোকেরা প্রচার করে থাকে ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দুই ঈদ ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। এ দাবি ভিত্তিহীন, মনগড়া ও কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। ঈসা (আ.)’র উপর আসমান থেকে খাবার ভর্তি দস্তরখানা অবতীর্ণ হওয়ার দিন, আরাফাতের দিন, শুক্রবার জুমার দিনসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করার বর্ণনা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর বিরোধিতা করা এক প্রকার মূর্খতার পরিচয়।

তবে একটি কথা বলতেই হয়, পবিত্র এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির মুসলমান যারা ইসলামে বর্ণিত নিষিদ্ধ যে কাজগুলো রয়েছে তারা সেগুলো করে থাকে। এটার মাধ্যমে প্রিয় নবীজিকে আরো অসম্মান জানানো হয়। তাই আমাদের উচিত যথাযথ মর্যাদায় এবং ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী এই পবিত্র দিবসটি পালন করা।

লেখক : কবি, লেখক, সাংবাদিক
প্রচার সম্পাদক, মেঘদূত লেখক পর্ষদ।


এ জাতীয় আরো সংবাদ