বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০২:০৫ অপরাহ্ন

‘ভাই, আপনার কাছে আমার সালামডা পৌঁছছেনি?’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি / ৭২ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২
ভাই_আপনার_কাছে_আমার_সালামডা_পৌঁছছেনি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি, প্রতিদিনের বার্তা || ‘ভাই, আপনার কাছে আমার সালামডা পৌঁছছেনি?’

এক পৌর কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতাসহ কয়েকজনকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ফোন আসামাত্রই জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সাথে দুষ্টুমির ছলে অন্যদের চাপের মুখে মোবাইল ফোনের লাউড স্পিকারে কথা বলতে থাকেন তিনি।

ওপ্রান্ত থেকে প্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই, আপনার কাছে আমার সালামডা আইছিলোনি আমার লোক?’ ওই প্রার্থী বলতে থাকেন, ‘কালকা শেষ সালামডা আইবো। আফনে খেয়াল রাখবেন আমার…প্রতীকের দিকে।’

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই প্রার্থী ও আখাউড়ার জনপ্রতিনিধির আলাপচারিতা শেষ হয় মিনিট দুয়েকের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে বেশ হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে থাকা অন্যরা। রাখঢাক না রেখেই জনপ্রতিনিধি জানিয়ে দিলেন যে কথার সারমর্ম হচ্ছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাকার লেনদেন। ইতিমধ্যেই একাধিক ভোটারের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে বলেও জানিয়েছেন ওই জনপ্রতিনিধি।

জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে বলে আলোচনা হচ্ছে সবার মুখে। চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের প্রার্থীরা টাকা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে ভোটকে কেন্দ্র করে টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টাকাপ্রাপ্তির কথা আবার স্বীকারও করেছেন কেউ কেউ। অন্যদের কাছে কিভাবে টাকা পৌঁছেছে সে বিষয়েও কিছু তথ্য দিয়েছেন তারা। তবে এ বিষয়ে সুবিধাভোগীদের কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না কিংবা সরাসরি কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।

জেলা পরিষদ ভোট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন প্রচারণাও তুঙ্গে। চেয়ারম্যান পদটি এখন আওয়ামী লীগের ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ পদে দল মনোনীত হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল আলম।

বর্ষীয়ান নেতা আল-মামুন সরকার জেলা পরিষদকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত, জনকল্যাণ ও উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, নিজের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন দাবি করে আবারও জয়ী হয়ে ধারা অব্যাহত রাখতে চাইছেন শফিকুল আলম।

নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদের প্রার্থীরা নিজ নিজ উপজেলার ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের (নারী) প্রার্থীদেরকে ছুটতে হচ্ছে তিন উপজেলায়। যে কারণে তাদেরকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে প্রচারণা চালাতে গিয়ে।

আখাউড়ায় সদস্য পদের ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজল প্রভাব বিস্তার করতে পারেন বলে তাকে এজেন্ট না দেওয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে চার প্রার্থী মেয়রের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটাতে পারেন বলে অভিযোগ আনেন। বৃহস্পতিবার কসবায় হামলার শিকার হয়েছেন সেখানকার সদস্য পদপ্রার্থী উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক মো. আইয়ুব আলী। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কসবায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আইয়ুব আলীর সমর্থকরা উপজেলার কুটি এলাকায় এ মানববন্ধন করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে শনিবার সকালে করা সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শফিকুল আলম অভিযোগ করেন যে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করতে পারেন বলে তিনি শঙ্কায় আছেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারকে ‘কথিত দরবেশ’ ও ‘কথিত সাদা মনের মানুষ’ উল্লেখ করে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণও করেন।

আখাউড়ার সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া ও মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর মেয়র তার লোকজন নিয়ে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল ও জোর করে ভোট আদায়ের মতো ঘটনা ঘটাতে পারেন। সর্বশেষ উপনির্বাচনেও তিনি একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। যে কারণে তাকে যেন এজেন্ট না দেওয়া হয় সে জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

অবশ্য পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ও সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলছেন যে এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। প্রার্থীদের দিয়ে কেউ এটা করাচ্ছেন। তিনি একজন ভোটার হিসেবে শুধু চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জন্য ভোট চাচ্ছেন।

অভিযোগ আছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনি টাকা ছড়াচ্ছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এসব অপপ্রচার। ওনার টাকা বিলানোর মতো এত টাকাও নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। শফিকুল আলম শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে নির্বাচন করছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার অবশ্য শুরু থেকেই জানিয়ে আসছেন যে তিনি আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান নন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শফিকুল আলম বিগত সময়টাতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা বানিয়েছেন অভিযোগ এনে এসব টাকা নির্বাচনে ব্যয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন আল-মামুন সরকার।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শফিকুল আলম বলেন, ‘তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী নন। দলীয় মনোনয়ন চাইলেও যেহেতু প্রতীক হিসেবে নৌকা নেই সে হিসেবে আমাকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যাবে না। ’ প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়ছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি।

আরেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আল-মামুন সরকার বলেন, ‘সমাজসেবা ও রাজনীতি আমার নেশা। ১৯৯৩ সালে বিএনপি শাসনামলে আমি পৌরসভার মেয়র (চেয়ারম্যান) নির্বাচিত হয়েছি। আমি নিজেকে এ পদের (জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) যোগ্য বা যোগ্যতম মনে করি না। তবে এ ক্ষেত্রে আমার কাজ করার আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা আছে। এই আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা আমাকে সফল করতে পারে। ’

এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ন বেআইনী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ