নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার নবীনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বাঙ্গরা বাজারে রাস্তার পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের ৮ মাসের মধ্যেই সরকারি খালসহ সড়ক ও জনপদের জায়গা আবারও দখলে নিয়ে আরসিসি পিলার এবং টিনশেডের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন ভূমিদস্যুরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়তই পথচারীরা নানাবিধ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের বাঙ্গরা এ বাজারটির দুই পাশের সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) এর জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে ব্যবসা করে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। কয়েক দফায় উচ্ছেদ অভিযান হলেও কি এক অদৃশ্য শক্তির কারণে পুর্ণরায় আবারও একই জায়গায় দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে, দেখার যেন কেউ নেই।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নীরবতায় সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে। এছাড়াও প্রতিবছর সওজের নোটিশ নিয়ে চলছে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য।
বাঙ্গরা বাজারে টাকার বিনিময়ে মিলছে দখলদারদের অবৈধ দোকান। গাজীপুর এলাকার হাবিব মিষ্টান্ন ভান্ডারের ইমন প্রতিদিনের বার্তাকে জানান, দোকান আমাদের না আমরা মালাই গ্রামের দিদার মিয়ার কাছ থেকে প্রতি বছরের জন্য ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে দোকান চালাচ্ছি।
বাঙ্গরা বাজারে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণকারী মহসিন জানান, আমরা গরীব অসহায় মানুষ আমরা যদি দোকান নির্মাণ না করে ব্যবসা-বাণিজ্য না করি তাহলে চলবো কিভাবে আমাদের তো পরিবার-পরিজন রয়েছে তারা চলবে কিভাবে। তাছাড়া বাজার কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির আশ্বাসেই আমরা দোকান নির্মাণ করেছি।
মুরাদনগর থানার খামারগ্রাম গ্রামের মতিন মিয়া নবীনগর উপজেলার ভাঙ্গরা বাজারে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের কাছ থেকে কোন অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারের কাছ থেকে কোন অনুমতি নাই। তবে বাজার কমিটি বিষয়টি জানেন।
দীর্ঘদিন ধরেই এ বাজারে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। যাত্রী ছাউনিতে যাত্রীদের বসার কথা থাকলেও সেখানে বসেছে সেলুনের দোকান। ব্যস্ততম ব্রিজের উপরে বসেছে চায়ের দোকান। অবৈধ দখলের কথাটি স্বীকার করে বাজার কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউলের ভাই বাশার সহ একাধিক দখলদার বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার উচ্ছেদ করা হয়েছে, আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদেরওতো বাঁচতে হবে তাই পেটের তাগিদে আমরা আবারও দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্য করছি। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে আমরা জায়গাটি ছেড়ে দেবো।
এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে দখলকারী এসকল দোকানের বৈধতা পাওয়ার জন্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রভাবশালী মহলে মোটা অংকের টাকার বিনিময় চলছে।
অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বাজার কমিটির সভাপতি মো. রবি বলেন,আগে যেখানে যারা ছিল এখনও সেখানেই তারা নিজ নিজ দায়িত্বে পুর্ণরায় স্থাপনা নির্মাণ করছে। এখানে কোন লেনদেনের বিষয়ে আমি জড়িত নয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকিব। দীর্ঘদিন ধরে যারা দখলে ছিল তারা দোকান নির্মাণ করে টাকার বিনিময়ে অন্য কোথাও ভাড়া দিয়ে থাকলে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমাদের কোন পরামর্শ তারা নেই না।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ এই বিষয়ে আমরা অবগত আছি। বিভিন্ন সময়ে এ বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকভাবে আমাদের উচ্ছেদ অভিযানে বাধা প্রধান করেছিলো, এ উছেদ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রভাব আমরা এবার আর বিবেচনায় নেব না। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই আমরা উচ্ছেদ অভিযানে যাবো।’
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে এসিল্যান্ড অফিসের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি, যে সকল জায়গায় অবৈধ দখল হচ্ছে এগুলো সওজের জায়গা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।