মো. আলমগীর হোসেন, নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সমবায় সুপার মার্কেটের সামনের দক্ষিণ-পূর্ব কোন ঘেষে প্রতিনিয়ত ডাবলিবুট (সাদা মটর) সিদ্ধ বিক্রি করছেন মো. জাকির মিয়া (৩২)। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে। জাকিরের বয়স যখন ৮ বছর (দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়) তখন তার পিতা- মদন মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। চার ভাই- বোন ও মা-বাবা নিয়ে অভাব অনটনের সংসারের এমন দুরবস্থায় তাকেই হাল ধরতে হয়। গত আঠারো বছর ধরে সে এই ডাবলিবুট বিক্রি করেই চালাচ্ছেন তার সংসার। তখন প্রতিদিন সে লঞ্চে নরসিংদীর রায়পুরার কালিকাপুর থেকে নবীনগর রোড়ে ফেরি করে ডাবলিবুট বিক্রি করত। এখন আর লঞ্চে যাত্রী হয় না, তাই ২০১২ সাল থেকে সে উপজেলার সমবায় মার্কেটের সামনে ডাবলিবুট বিক্রি করে আসছে। তবে শুক্রবার সে ডাবলিবুট বিক্রি না করে পরিবারকে সময় দেন। প্রতিদিন তার অস্থায়ী দোকানের সামনে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণীর মানুষ ভীড় জমায়। সে জানায়- প্রতিদিন দুই হাজার টাকা থেকে দুই হাজার দুই শত টাকা বিনিয়োগ করে দশ টাকা বিশ টাকা করে আটত্রিশ শত থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি। এত টাকা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের বার্তাকে জানান- বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে (যেমন- পিঁয়াজ, ধনিয়া পাতা, লেবু ও লেবুর বাকল, কাঁচা মরিচ, গাজর, শসা, ক্ষিরা, টমেটো, বিট লবন, ভাজা মরিচসহ বিভিন্ন প্রকার মসলা) সিদ্ধ ডাবলিবুট তৈরি করার ফলে বিক্রি বেশি হয়। ছয় জনের সংসারে তার এই কষ্টার্জিত উপার্জনের মাধ্যমে ছোট ভাইকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা অবস্থায় প্রবাসে পাঠান। এক বোনকে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা অবস্থায় বিবাহ দেন। কষ্টার্জিত এ উপার্জনের মাধ্যমে জাকির তার বাড়িতে ঘড় তৈরির করার পাশাপাশি এক বিঘা জমি ও ক্রয় করেন। বর্তমানে তার ছোট বোনকে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করাচ্ছেন। সে আরো জানান- বিশেষ খেলাধুলা, ওয়াজ-মাহফিল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বুট স্বাভাবিক বিক্রির চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বিয়ে করেছে কিনা জানতে চাইলে সে হেসে বলে- আমি বিয়ে করেছি, বর্তমানে আমার এক ছেলে ও এক মেয়েসহ ছোট ভাই এবং মা ও বোনকে নিয়ে ভালোই আছি।