রাজারহাট, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি.
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কয়েক দফা বন্যার পর তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৩ ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার বাস্তহারা হয়ে পড়েছেন। নদীগর্ভে বসতভিটা হারা পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে উচুঁ বাধে কেউ বা স্কুল মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রতি বছরে বন্যায় সৃষ্ট এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান নদী পাড়ের নিঃস্ব মানুষ গুলো।
গতকাল বুধবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গেলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বসতবাড়ির মানুষেরা কষ্টের কথা জানান। ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবী করেছেন ভোক্তভূগিরা। নদী পাড়ের মানুষেরা বলছেন শুধু বন্যা ও বর্ষা নয় মৌসুমে সারা বছরেই নদী ভাঙ্গন রোধে গুরুত্বরোপ করা উচিত। অন্য দিকে এবারে দীর্ঘ স্থায়ী বন্যা পরিস্থিতির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভাঙ্গন রক্ষায় বড় প্রকল্প গ্রহনের পরিকল্পনার কথা ভাবছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুড়িগ্রাম জেলার বাজারহাট উপজেলার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার পানি কমলে ওসব জায়গায় এক রকম নয়। কোথাও পানি কমছে আবার কোথাও পানি বাড়ছে। বন্যায় অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, ঠিকানা কেড়ে নিয়েও শান্ত হয়নি খর¯্রােত তিস্তা নদী। এখন শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। বর্তমানে তিস্তা নদীর আর এক নাম ভাঙ্গন আতংক। উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুর হেলানের আবুল হোসেন (৪০) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন হামার কপাল পোড়া ব্যাহে। কায়ো হামার গুলার কথা শুনেনা। ঘরোত আগুন লাহলে, তাকনিভিয়া নতুন করে ঘর বানা যায়। কিন্তুক নদী ভাঙ্গলে হামার ভাগত আরকি থাকে ? একটা বেরিবাধ হইলে হামার গুলার এত বড়ক্ষতি হইলো না হয়। একই গ্রামের আব্দুল মান্নান (৬০) আইজার রহমান (৫৫) জানান, নদী ভাঙ্গন এলাকার মানুষের মাঝে অসহায় মানুষ আর কোথাও নেই। দিন রাত মনের ভিতরে শুধু ভয় কাজ করে কখন নদী হানা দেয়। অনেক সময় হাজারো চেষ্টা করেও ঘর বাড়ি বাঁচানো সম্ভব নয়। যাদের একেবারে জায়গা নাই, তাদের কষ্টতো সীমাহীন। সম্প্রতি দীর্ঘ স্থায়ী এই বন্যায় রাজার হাটে তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়েছে প্রায় শতাধিক পারিবার ঘর বাড়ি হারার পাশাপাশি ফসলী জমি গাছপালা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এদিকে পানি যতোই কমছে ততই তীব্র হচ্ছে নদীর ভাঙ্গন বিলীন হয়েছে ব্যারি বাধও ক্রস বাধসহ বাড়ি ঘর ও ফসলী জমি অথচ ৩ বছর আগে থেকে এই সমস্যার কথা জানান দিলেও অস্থায়ী প্রতিরোধের চেষ্টাতেই সীমাবদ্ধ পাউবোর দৌড় ঝাপ। বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, এবার বন্যায় এই ইউনিয়নের গাবরি হেলান মন্দির, কালিরহাট ও রামহরিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গনসহ মসজিদ মাদ্রাসা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবিলম্বে তিস্তা নদীর বাধ নির্মানসহ তিস্তা নদী খনন করা না হলে নদী যেদিক পাবে সেদিক প্রবাহিত হবে। ফলে তিস্তা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
কুড়িগ্রাম পানিউন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহমুদ হাসান জানান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রত্যেক এলাকায় জিও ব্যাগ মজুদ আছে। তাৎক্ষনিক ভাঙ্গন রোধের জন্য জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।